রাজধানীর কচুক্ষেতে বাসায় আটকে রেখে লিমা আক্তার (১৫) নামে এক গৃহকর্মীকে ইস্ত্রি ও গরম রডের ছ্যাকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পর চিকিৎসা না করে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতিতা লিমা আক্তার ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কৈচাপুর ইউনিয়নের দর্শারপাড় গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। তার শরীরে ইস্ত্রি ও গরম রডের ছ্যাকার চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
লিমার পরিবার জানায়, লিমা চার মাস আগে প্রতিবেশী আছিয়ার মাধ্যমে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট কচুক্ষেত এলাকার চৈতালী ১/ডি ব্লকের সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার বাসায়। অভিযুক্ত গৃহকর্ত্রী নিহত সেনা কর্মকর্তা তানভীরের স্ত্রী মীম ওরফে মাহী বেগম।
স্বজনদের দাবি, কাজ শুরুর কয়েকদিন পরে বিভিন্ন অজুহাতে তাকে মারধর করতো মাহী বেগম ও তার ছেলে ওয়াদা। সম্প্রতি তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইস্ত্রি ও রড গরম করে ছ্যাকা দেয়া হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লিমাকে গুরুতর অবস্থায় হালুয়াঘাটের একটি বাসে উঠিয়ে দেন মীম। পরে বুধবার সকালে বাড়িতে আসার পর লিমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তার পরিবার।
লিমা জানায়, কিছুদিন কাজ করার পর থেকে বাসার গৃহকর্ত্রী মীম ওরফে মাহী নানা অজুহাতে আমার ওপর নির্যাতন শুরু করে। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমি আন্টিকে বলি আন্টি আমার বেতন দিয়া দেন আমি বারিত যামুগা। এমন কথায় সে আয়রন গরম করে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছেঁকা দেয়। তালা দিয়ে আঘাত করে আমার দাঁত ফালাইয়া দেয়, খুন্তি গরম কইরা আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গাসহ লজ্জাস্থানে ছেঁকা দেয়। প্লাস দিয়ে পায়ের নখ তুলে ফেলে। ঈদের দিনেও আমাকে পেট ভইরা ভাত খাইতে দেয়নাই। আমার মাথা ফাটাইয়া চুল কাইট্টা দেয়। উনি মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে গেলে তার ছেলে ওয়াদা ও অপর এক কাজের মেয়ে পিংকীকে আমাকে মারার জন্য বলতো। তারা আমাকে অনেক মারছে। ব্যথার যন্ত্রণায় আমি বারবার কইতাম আন্টি আমারে কয়ডা বড়ি (ট্যাবলেট) আইন্না দেন আমি আর সহ্য করতে পারতাছি না। আমারে কোনো দিনও এক টাকার বড়িও আইন্না দেয় নাই।
লিমা আরও বলে, মঙ্গলবার আমি অনেক কৌশলে বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তারাই আমাকে ময়মনসিংহের বাসে তুলে দেয়।
লিমার বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, আমার মেয়ের ওপর যে অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছে তার বিচার চাই। আমি এই ঘটনায় থানায় মামলা করব।
এ ব্যাপারে গৃহকত্রী মীমের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তার খালাতো ভাই কাজল জানায়, লিমাকে কেউ মারধর করেনি। ওকে বাড়িতে আসতে না দেয়ায় রাগে নিজের গায়ে নিজেই আঘাত করেছে।
এদিকে বুধবার তাকে স্থানান্তর করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অমানুষিক নির্যাতনে লিমার দুটি দাঁতও ভেঙে গেছে। তার শরীরে গভীর ক্ষত রয়েছে বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক।
হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. রবীন বলেন, 'আঘাত কিছু নতুন ও পুরাতন রয়েছে। কিছু পরীক্ষা দিয়েছি, রিপোর্ট আসলে জানতে পারবো।
এ ঘটনায় হালুয়াঘাটের ওসি বিপ্লব কুমার বিশ্বাস হাসপাতালে গিয়ে লিমার খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি জানান, নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবার যদি অভিযোগ দেয় পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টাইমস/এইচইউ